পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির কালাই সাব-জোন অফিস হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের লক্ষ্যে সময় বেঁধে না দিয়েই মাইকে প্রচার চালানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আবার বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে গিয়ে প্রদেয় বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত টাকাও গুনতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই বিকাশ অ্যাকাউন্টে বিল পরিশোধ করলেও বিদ্যুৎ অফিসের সার্ভারজনিত সমস্যার কারণে গ্রাহকের বিপরীতে টাকা জমা না হওয়ায় তাদের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব কারণে গ্রাহকরা নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকদের দাবি, একইসঙ্গে দুটি কাজ চলতে পারে না। প্রচারের সঙ্গে অবশ্যই টাকা পরিশোধের নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করতে হবে। পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি যখন যা খুশি তাই করতে পারে না। অহেতুক হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন গ্রাহকরা।
তবে কালাই সাব-জোন অফিসের ডিজিএম হামিদুল হক গ্রাহকদের এমন দাবি নাকচ করেছেন।
রোববার সরেজমিন জয়পুরহাট পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির কালাই সাব-জোন অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার ও শনিবার হঠাৎ করে বকেয়া বিদ্যুৎবিল আদায়ের লক্ষ্যে পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি পুরো উপজেলায় মাইকিং করছেন। একইসঙ্গে গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে বিল উত্তোলনের মাইকিং প্রচার অন্যদিকে সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ চলমান রেখেছে পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতিতে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে গিয়ে নতুন করে সংযোগ ফি বাবদ বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত ৬৯০ টাকা জমা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সেই টাকা জমা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিল পরিশোধ না করেই ফেরত আসতে হয়েছে অনেক গ্রাহককে। ফলে সেইদিন তাকে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই রাত্রিযাপন করতে হয়েছে।
এছাড়া পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির বিকাশ অ্যাকাউন্টে বিল পরিশোধ করার পরও অনেকেরই লাইন কর্তন করা হয়েছে।
কালাই হাসপাতাল গেটে বিকাশ ব্যবসায়ী সজীব হোসেন অভিযোগ করেন, আমার বিকাশের দোকান। অনেক গ্রাহকেরই বিদ্যুৎ বিলের টাকা পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছি। সঙ্গে আমার দোকানের বিলও দিয়েছি। রোববার সকালে এসে কোনো কথা না বলেই লাইন কেটে দিয়েছে। অফিসে এসে জিজ্ঞাসা করেছি আমার লাইন কেন কাটা হয়েছে, তারা বলছে সার্ভারের সমস্যা তাই টাকা জমা দেখাচ্ছে না। সার্ভার ঠিক হলেই আপনার টাকা জমা দেখাবে আর তখন আপনার লাইনও সংযোগ দেওয়া হবে।
কালাই পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ট্রাকচালক তাজুল ইসলাম বলেন, গত তিন মাসে আমার বাড়ির বিদ্যুৎবিল এসেছে জরিমানাসহ ১ হাজার ২৬২ টাকা। আমি একজন ট্রাকচালক, বাহিরে থাকার কারণে বিল পরিশোধ করতে পারিনি। হঠাৎ করে রোববার বাড়িতে এসে দেখি আমার বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দিয়েছে। অফিসে গিয়ে ওই টাকা পরিশোধ করতে চাইলে তারা আমাকে ওই বিলের সঙ্গে আরও ৬৯০ টাকা দিতে বলেন। এছাড়া লাইন লাগাতে আরও ২০০ টাকা দিতে বলে। লাইন কাটার পর যদি অতিরিক্ত টাকা দিতে তাহলে দেশে আর আইন থাকলো কোথায়। ওরা যা খুশি তাই করছে, বলার বা দেখার যেন কেউ নেই।
উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বানদিঘী গ্রামের বাসিন্দা ফেরদাউস হোসেন বলেন, আমার কোনো বিল বকেয়া নেই। আমি নিজেও জানি না কোন ব্যক্তি আমার লাইন কেটে দিয়েছে আর কেনই বা দিয়েছে। তা জানতে রোববার সকালে আমি কালাই পল্লিবিদ্যুৎ অফিসে এসেছি। তারা আমাকে আবেদন করতে বলেছে। আবার যে ব্যক্তি লাইন কর্তন করেছে তার নাম এবং মোবাইল নম্বর দিতে বলেছে। সঙ্গে নতুন সংযোগের জন্য ৬৯০ টাকা জমাও দিতে বলেছে। আমি অশিক্ষিত মানুষ, লেখাপড়া কিছুই জানি না। তাই নিরুপায় হয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।
কালাই তালুকদার পাড়ার আব্দুল গোফ্ফার বলেন, এক মাসের বিল বাকি ছিল, সেই টাকাও রোববার সকালে বিকাশে পরিশোধ করেছি। বার বার বলার পরও তারা আমার বাড়ির লাইন কেটে দিয়েছে। তাই অফিসে এসেছি, এখন বলে আরও ৬৯০ টাকা জমা দিতে হবে। আমার মতো অনেকেরই এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন যে কি করব তা ভেবে পাচ্ছি না। এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
জয়পুরহাট পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির কালাই সাব-জোন অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) হামিদুল হক বলেন, হঠাৎ করে নয়, বেশ কয়েকদিন ধরেই বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এরইসঙ্গে লাইনও কর্তন করা হচ্ছে। আর অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না, লাইন কর্তনের পর গ্রাহক যদি পুনরায় সংযোগ নিতে চায় তাহলে অবশ্যই সংযোগ ফি জমা দিতে হবে। এর বাহিরে কিছুই না।