পরিস্থিতিতে কর্মসূচি নিয়ে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে বিএনপি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সভা-সেমিনারের মতো ‘ঘরোয়া’ কর্মসূচি দিয়ে সক্রিয় থাকবে দলটি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের নানা অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরা হবে এবং খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানানো হবে।
সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে আর্থিক ও ব্যাংক খাতের নানা দুর্নীতি সম্পর্কে জাতিকে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক এসব তথ্য জানিয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ জারি রাজনৈতিক কারণে করা হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি নেতারা। তাই এবার সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বরং জেলার সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ‘স্পিরিট’ তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখতে চায়। এজন্য নানা ইস্যুতে সভা-সেমিনার করবে দলটি, যা ধারাবাহিকভাবে করা হবে। গুম-খুন নিয়েও বেশ কয়েকটি ঘরোয়া কর্মসূচি দেবে দলটি।
যেখানে গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা থাকবেন। এরই অংশ হিসাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরোয়াভাবে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে আলোচনা সভা করে বিএনপি। ‘বাকশাল-গণতন্ত্র হত্যার কালো দিবস’ পালনে এই সভা হয়।
এছাড়া দেশের বাইরের সাংগঠনিক শাখাগুলোও ভার্চুয়াল সভা করবে। বুধবারও বেলজিয়াম বিএনপির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য অংশ নেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, জার্মানিভিত্তিক ডয়েচে ভেলের একটি জরিপে দেখা গেছে ৮৮ শতাংশ মানুষ বলেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধির জন্য কাজটি করা হয়নি। যেখানে দেশের মানুষ এমনটি মনে করে, সেখানে আমাদের কর্মসূচি করতে তো কোনো বাধা নেই।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরোয়াভাবে সভা-সেমিনারের বাইরে আর কী কর্মসূচি নেওয়া যায়. সে বিষয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও মতামত নিচ্ছে বিএনপি হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের মতামত দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, সরকারের মেয়াদ দুই বছরও নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা থেকে পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের মূল দাবি আদায়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছি।
বিএনপির একাধিক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে জেলায় জেলায় সমাবেশ কর্মসূচি করছিলাম। প্রথম দফায় নানা বাধার পরও ২৮ জেলায় সমাবেশ করেছি। নেতাকর্মীরা বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় দফায় ৩৯ জেলায় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ৭ জেলায় সমাবেশ করার পর বিধিনিষেধের কারণে বাকি জেলার কর্মসূচি পুনর্নির্ধারিত করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। কিন্তু দলের হাইকমান্ড এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।
তারা জানান, বিধিনিষেধের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ‘একতরফাভাবে’ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। এদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে। বিধিনিষেধের মধ্যে সরকার তার সব ধরনের কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, গণপরিবহণ, বাণিজ্য মেলা প্রায় সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ অবস্থায় বিএনপির চুপচাপ থাকা সঠিক হবে না বলে মনে করেন নেতারা।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, সোমবারের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে সরকারের বিধিনিষেধ ও দলের পরবর্তী কী কর্মসূচি করা যায় তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে কোনো কোনো নেতা জেলা সমাবেশ পুনরায় শুরুর পক্ষে মত দেন। আবার কয়েক নেতা বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে কর্মসূচি করা সমীচীন হবে না বলে মত দেন। তবে ঘরোয়া কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে সব নেতা একমত হন।
সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র-এ দুটিকে ভিত্তি ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক নানাভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দলটির নেতাদের মতে, এবার পরিস্থিতি বুঝে এগোতে চান তারা। যেহেতু বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকারের প্রতিফলন জনগণ দেখতে পায়নি, এবার তারা সেই ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের কর্মকাণ্ডকে অব্যাহত রাখতে চাই। বিএনপির জেলার সমাবেশকে কেন্দ করে সারা দেশের মানুষের মধ্যে একটা উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসূচি না থাকলে একটা গ্যাপ হয়ে যাবে।