আমতলী-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাখারিয়া থেকে বান্দ্রা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার সড়কের পাশে ৫টি স্থানে সাপ্তাহিক হাট এবং ১৮টি স্থানে অবৈধ ধানের বাজার গড়ে উঠেছে। সাপ্তাহিক হাট ও অবৈধ বাজার বসায় ওই সড়কে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন হচ্ছে। ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
চলতি মৌসুমে আমতলী উপজেলায় ৮৭ হাজার মেট্রিকটন আমন ধানের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ ভাগ ধান কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করে। ফরিয়ারা নিজেদের ইচ্ছা মাফিক আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপরে অবৈধভাবে ধানের বাজার বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছেন। এ সকল অবৈধ বাজারে ফরিয়াদের কোনো রাজস্ব দিতে হয় না। এতে কৃষকরা নির্ধারিত বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বাজারে কৃষকরা ধান নিয়ে যাচ্ছে না এতে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারছেন না। ফলে নির্ধারিত হাট-বাজারের ইজারাদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অপরদিকে ফরিয়ারা ঝিনাইদহ, মাগুড়া, যশোর, খুলনা, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান নেওয়ার জন্য আমতলী- পটুয়াখালী – কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের উপড় ট্রাক, কার্ভাট ভ্যান, লরি, পিকআপ দাঁড় করিয়ে ধান বোঝাই করছে। এতে ওই সড়কে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘœ হচ্ছে। ঘটছে অহরহ দূর্ঘটনা।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আমতলী-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাখারিয়া থেকে বান্দ্রা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার সড়কে শাখারিয়া, ব্রিকফিল্ড, মহিষকাটা, চুনাখালী, সাহেববাড়ী, আমড়াগাছিয়া, ডাক্তারবাড়ী, শিকদারবাড়ী, ঘটখালী, নতুন বাজার বাঁধঘাট, ছুড়িকাটা, মানিকঝুড়ি, খুড়িয়ার খেয়াঘাট, আকনবাড়ী, ফকিরবাড়ী, খলিয়ান, কল্যাণপুর ও বান্দ্রা বাসস্ট্যান্ডে অবৈধ ধানের বাজার রয়েছে। এছাড়াও ওই সড়কের মহিষকাটা, আমতলী, মানিকঝুড়ি, খুড়িয়ার খেয়াঘাট ও বান্দ্রা বাসস্ট্যান্ডে সাপ্তাহিক হাট বসে।
মানিকঝুড়ি বাসস্ট্যান্ডের হিরণ মৃধা বলেন, এখন আর ধান বিক্রি করতে সরকার নির্ধারিত দূরের বাজারে যেতে হয় না। ফরিয়ারা বাড়িতে এসে ধানের দরদাম করে বায়না করে যায়। পরে ওই ধান বাড়ি থেকে তাদের নির্ধারিত স্থানে থাকা তাদের গাড়িতে পৌঁছে দেই।
কুকুয়া রায়বালা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, চুনাখালী গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, খোরাকী রেখে বাকী ধান বাড়িতে বসেই ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। বিক্রি করা ধান পার্শ্ববর্তী মহিষকাটা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়েছি।
আমতলী পৌর শহরের বাসিন্দা অ্যাড. মনিরুজ্জামান মনি বলেন, নতুন বাজার বাঁধঘাট সড়কের দুই পাশের ফুটপাত এমনিতেই ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল রেখে দখল করে রেখেছে। তারপর আজ (বুধবার) সাপ্তাহিক হাটে ধান রেখে যেভাবে সড়কের দুই পাশ দখল করে রেখেছে তাতে আমাদের মত পথচারীদের হেঁটে চলাচল করা খুবই দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বরগুনা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সদস্য মো. হাসান মৃধা জানান, শাখারিয়া থেকে বান্দ্রা পর্যন্ত মহাসড়কে অবৈধভাবে ধানের বাজার গড়ে ওঠায় গাড়ি চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কে বাজারবসায় মাঝেমধ্যে আমাদের গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। অহরহ ঘটতে দুর্ঘটনা। তিনি দ্রুত মহাসড়কের ওপর থেকে ওই বাজারগুলো বন্ধের দাবি জানায়।
আমতলী উপজেলা ধান চাল আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ মো. জাকির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, উপজেলার মহাসড়কের ওপর ১৮টি স্থানে ফরিয়ারা অবৈধভাবে ধানের বাজার গড়ে তুলেছে। এতে কৃষকরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বাজারে ধান নিয়ে আসছে না। ফলে আড়ৎদাররা চাহিদা মতোধান না পেয়ে তাদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হচ্ছে। তিনি দ্রুত ওই সকল অবৈধ বাজার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন।