সুগন্ধা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ২৫ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন হনুফা বেগম। পরে বাড়ির আঙ্গিনায় নতুন কবর দেখে তাঁর মনে হয় ওই দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। এটি তাঁরই কবর। এর পরই জ্ঞান হারান হনুফা।
হনুফা বেগমের অনুমানই ঠিক। গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ওই দিনই তাঁর স্বামী আবদুর রাজ্জাক মিয়ার মৃত্যু হয়েছিল। হনুফা অসুস্থ থাকায় তাঁকে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ কেউ দিতে সাহস করেনি। তিনি অজ্ঞান হওয়ার পর হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়; বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে। পরে তাঁর জ্ঞান ফিরলে তাঁকে ঘটনা জানানো হয়। গত ১৮ জানুয়ারি এ ঘটনা ঘটে। আজ রবিবার রাজ্জাক মিয়ার জন্য মিলাদ ও দোয়ার অনুষ্ঠান করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে আহসান হাবিব রানা।
বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বরইতলা মহল্লায় মহিলা কলেজের পাশে আবদুর রাজ্জাক মিয়ার (৫৬) বাড়ি। তিনি ছিলেন মাদরাসার শিক্ষক। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
হনুফা বেগম বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ দিনে আমাকে কোনো মতে স্বামীর কথা না বলে মিথ্যা প্রবোধ দিয়েছে। আমি বাড়িতে আসার পরও ঘরের বাইরে যেতে বারণ করত। আমি বাড়ির উঠান ও আঙ্গিনা ঘুরে দেখার সময় একটি নতুন কবর দেখে স্বজনদের প্রশ্ন করলে তারা লা জবাব। আমি বুঝতে পারি, একটি দুর্ঘটনায় অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। ’
একই লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার রাজ্জাক মিয়ার মেয়ে বরিশাল বিএম কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুবি (২৪) ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আগুন দেখার ৩-৪ মিনিটের মধ্যে প্রচণ্ড অন্ধকার ও অসহনীয় ধোঁয়ায় অনুমান করে পানিতে ঝাঁপ দিই। ’
রুবি বলেন, ‘আব্বু সম্ভবত নদীতে পড়ার সময় মাথায় বড় আঘাত পেয়েছিলেন। পানি থেকে আমি তাঁকে টেনে কূলে তোলার চেষ্টা করি; কিন্তু নিজেকে সামলে তা পারছিলাম না। এক পর্যায়ে দেখি তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। আমি আব্বুর লুঙ্গি পায়ের দুই আঙুল দিয়ে টেনে ধরি; কিন্তু তিনি পানিতে তলিয়ে যান। আব্বুকে হারাই এভাবেই। ’
‘মাকেও পাই পানিতে হাবুডুবু করা অবস্থায়। তাঁর দুই হাত, নিতম্ব পুড়েছে আগুনে। রাতেই মা ও আমাকে ঝালকাঠি হাসপাতালে এবং পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমাকে ১৫ দিন, মাকে ২৫ দিন পরে রিলিজ দেওয়া হয়’, বলেন রুবি। রাজ্জাক মিয়ার শিক্ষকতার টাকায় চলত দুজন শিক্ষার্থীর খরচসহ দরিদ্র পরিবারটি।