পাকিস্তানি শাসকদের কাছ থেকে তথা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশমাতৃকাকে উদ্ধার করার জন্য, জাতির অধিকার আদায়ের জন্য, সর্বোপরি একটি পতাকার জন্য এদেশের নারী-পুরুষ, আবালবৃদ্ধবনিতা সম্মিলিতভাবে লড়েছিল ১৯৭১ সালে এবং দেশকে মুক্ত করেছিল আর ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল বলে মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
সোমবার (৮ মার্চ) নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়নÍী উদযাপন নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত “বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও নারী সমাজ”-শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানিদের হাতে প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, আর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দুই লাখ নারী। সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কিশোরী, তরুণী, প্রৌঢ়া, এমনকি প্রবীণ নারীরাও কীভাবে তাদের ক্ষতবিক্ষত জীবন পার করেছেন তা কল্পনার অতীত।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এসব নারীর কেউ কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের ভেতরে। বাঙালির এযাবৎকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও গৌরবজনক জাতীয় আন্দোলন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীরাও যে পুরুষের পাশাপাশি যুদ্ধ প্রক্রিয়ার সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা অনস্বীকার্য।
নাগরিক কমিটির সদস্য ও নারী নেত্রী মোসা. জেসমিন সুলতানার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্ববায়ক জাসদ উপদেষ্টা এনামুজ্জামান চৌধুরী, নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা, নারী নেত্রী কাজী শাহনাজ মিনু, আইরিন আক্তার দিবা, চিত্রা রানী দেবী প্রমুখ।
জাসদ উপদেষ্টা এনামুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিশালতাকে পরিমাপ করা যাবে না। এ বিশালতায় যেসব নারী বিভিন্ন অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যমন্ডিত করেছেন তাদের অনেকের নাম এখনও অজানা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এসব নারীর মধ্যে স্বল্পসংখ্যক ছিলেন শ্রমজীবী নার্স, সমাজসেবী, গৃহকর্মী ও চাকরিজীবী। অধিকাংশই ছিলেন গৃহিণী। এসব নারীর কেউ কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের ভেতরে।
এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে লাখ লাখ বাঙালি নারীর আত্মত্যাগ স্মরণ করার সময় এসেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের মানুষ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেক অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছেন। কিন্তু মহিলা বা নারীদের বেদনা ও কষ্টটা ছিল অনেক বেশি, অনেক বেশি অব্যক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মা-বোনেরা বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জুগিয়ে গেছেন। নানা কর্মের মাধ্যমে অবদান রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধে। তখন এ ভূখন্ডের জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল নারী। কখনই এটি ভাবার উপায় নেই যে, মুক্তিযুদ্ধে এ নারী গোষ্ঠীর কোনো অবদান নেই।
সভাপতির বক্তব্যে মোসা. জেসমিন সুলতানা বলেন, রণাঙ্গনে দাঁড়িয়েও বিপুল বিক্রমে লড়েছেন নারীরা। তবু আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের সঠিক মূল্যায়ন আজও হয়নি। এ ক্ষেত্রে কেবল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নয়, বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যাবে, যেকোনো অমানবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ অথবা স্বাধীনতাযুদ্ধে নারীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়।