দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শুধু মুখে না বলে এবং নির্দেশনা না দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে ড. মোমেন বক্তব্য দেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিকাব সদস্য ইসরাত জাহান উর্মি। অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশাফি বিনতে শামস, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শিউয়াখ, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দা বার্গ ফন লিন্ডে, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সমীর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোমেসি শাখার মহাপরিচালক সামিয়া হালিম, ডিকাবের সভাপতি পান্থ রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দিন বক্তব্য দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরও বলেন, আমি খুবই হতাশ হই যখন দেখি রোহিঙ্গাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। রোহিঙ্গারাও হতাশ হয়ে পড়ছে। সম্মানজনক জীবন পেতে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জড়িত সব ব্যক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নির্দেশ না দিয়ে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে এবং অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করা উচিত। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাড়ে তিন বছরে ১৫ বার রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সরকার নির্যাতন করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে অল্প কয়জন সেনা কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করছে, যা যথেষ্ট নয়। সব দেশই মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিনিয়োগ আরও বাড়ছে। যারা শান্তি নিয়ে কাজ করে তারাও নীরব। কুতুপালং বা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া সমাধান নয়। তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। আমরা চাই বিশ্ববিবেক জেগে উঠুক। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বিশ্ব শক্তিগুলো ব্যর্থ, যা তাদের জন্য লজ্জার।
ড. মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশু। নারী দিবসে আমি বলতে চাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে রোহিঙ্গা নারীরা।
তারা তাদের সবকিছুই হারিয়েছে। এ অবস্থায় তারা যদি চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে, তাহলে এটা শুধু এ অঞ্চল নয়, গোটা দুনিয়াকে বিপদে ফেলে দেবে। অশান্তির আগুন এক জায়গায় লাগলে তার তাপ বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত প্রভাবশালী রাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর উচিত রাখাইনে যাওয়া এবং প্রত্যাবাসনের অনুক‚ল পরিবেশ তৈরিতে মনোনিবেশ করা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেও মিয়ানমার তা করছে না। প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ শুরু করতে বলেছে।