শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ অপরাহ্ন

ত্রিশ দিন কাম করি, খাই কিসের নারী দিবস

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। কিন্তু নারী দিবস কি এবং কেন পালন করা হয় এসবের কিছুই জানেন না গ্রামের শ্রমজীবী নারীরা।

তেমনি একজন নারী জমিলা বেগম। বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কাবিলাপাড়া গ্রামে। কৃষি ও ইট ভাঙার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

তিনি বলেন, হামার কিসের নারী দিবস। কর্ম করলে খাবার জোটে না করলে নাই। আজকে প্রথম শুননু কিসের বলে নারী দিবোস। আল্লাহর ত্রিশ দিন কাম করি খাই। কাম নাই খাবার নাই। এখন তো কোনো কাম নাই। ১৫/১৬ দিন থাকি বসি আছি। কাম করি যে কয়টা টেকা জোগার করছুনু তাও শেষ। ৩/৪ দিন থাকি হাস্তেয়া (হাত দিয়ে) মাছ ধরি বাড়িতে বিক্রি করছি। এতে যে কয় টাকা হয় তাকে দিয়ে চাউল ডাউল আনি খাই। দুনিয়াত বলে কতো কি হয় হামার ভাগ্যে কিছুই হয় না।

শুধু জমিলা বেগম নয়, তার মতো অনেকে নারী দিবস পালনের বিষয়টি না জানলেও প্রতিদিনই কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কর্ম তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। গ্রামীণ নারীদের এক কথা পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও সমান তালে কাজ করতে হবে। তবেই স্বামী সন্তান নিয়ে একটু শান্তিতে হলেও দিন যাবে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এতো পরিশ্রম করেও তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার। এখনও দিনমজুরিতে পুরুষের অর্ধেক পারিশ্রমিক পান তারা।

আজ সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের মাষাণ কুড়া নদে মাছ শিকার করছেন এক দল নারী। নারী দিবসের দিনে মাঠে কাজ করার পাশাপাশি মাছও ধরছেন তারা। শুধু হাত দিয়েই একেক জন এক থেকে দেড় কেজি মাছ শিকার করেছেন। সব দেশী প্রজাতির কৈ, পুঁটি, টেংরা, গছি, শিং ও পদ্মাসহ বিভিন্ন মাছ। নদীর এক পাশে ২০/২২ জন নারী দল বেঁধে মাছ শিকার করছেন।

তাদের প্রত্যেকের শিকার করা মাছের বাজার মূল্য প্রায় চার থেকে ছয় শত টাকা। বাজারে দেশী মাছের প্রচুর চাহিদা থাকায় কম সময়ের মধ্যে মাছ বিক্রি হয়ে যায়। অনেক ক্রেতা দেশী মাছ ক্রয়ে নদী পাড়ে অপেক্ষায় থাকেন নারীদের শিকার করা মাছ কম দামে পাওয়ায় আশায়। নারীরা কষ্ট করে মাছ শিকার করলেও তারা হাট-বাজারে বিক্রি করেন না। মাছ শিকারের সময় বা বাড়িতে গ্রাহক পেলেই তাদের কাছে বিক্রি করে দেন। তাও আবার কি পরিমাণ টাকা দিবে সেটাও ক্রেতার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময় ক্রেতারা পছন্দমত টাকা দিয়ে নারীদের নিকট থেকে মাছ ক্রয় করতে পারেন। এখন মাঠে কাজ না থাকায় অনেক নারী মাছ ধরা পেশা বেছে নিয়েছেন। অনেকে আবার স্বামী সন্তান নিয়ে একবেলা ভালো খাবারের আশায় মাছ ধরছেন।

মাছ শিকারী আয়শা বেগম বলেন, জমিতে কাজ করে যে কয় টাকা পাই তা দিয়া মাছ, গোস্ত কিনবার পাই না। খালি চাউল, লবণ, তেল, মরিচ, পেঁয়াজ ও তরকারি কিনতে টাকা শেষ হয়। মাছ গোস্ত ভাগ্যে জোটে না। কয়দিন থাকি কাম নাই। এজন্য নদীতে মাছ ধরবার আসছি। পুরুষেরা জাল দিয়ে মাছ ধরে আর আমরা হাত দিয়া ধরি। এক কেজির মতো মাছ পাইছি। বিক্রি করবার নই। স্বামী সন্তান নিয়া দুই দিন ভালই খাওয়া যাবে।

মাষাণ কুড়া নদের পাড়ের বাসিন্দা ছাইফুল ইসলাম খান কর্ণেল জানান, মাষাণ কুড়া একটি মরা নদী। এ নদী থেকে অনেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। পুরুষের পাশাপাশি এলাকার নারীরা হাত দিয়ে মাছ শিকার করেন।  নেকে শখের বসেও মাছ শিকার করেন।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.