হাজার বছরের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় হিসেবে পরিচিত ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ভাষণ।
বাঙালির সেই মুক্তি সনদ, যা ৭ মার্চের ভাষণ হিসেবে পরিচিত। সেই ভাষণের মূলকপি বা রেকর্ডটি পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করতে দীর্ঘদিন দোহার চরকুশাই খানবাড়ির ধানের গোলার ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়। পরে সেটি ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এতপর ভারত থেকে বেশকিছু কপি করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। সেই কপিগুলোও পাকবাহিনী নষ্ট করতে চেষ্টা করে।
জানা যায়, তৎকালীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বিভাগের ক্যামেরা সহকারী হিসেবে কাজ করতেন খন্দকার আমজাদ আলী। তিনিই এ রেকর্ড সংরক্ষণে সহযোগিতা করেছিলেন। ভাষণ রেকর্ডের পর সেটা সংরক্ষণে উদ্যোগী হন মহিবুর রহমান খান নামে বিটিভির এক কর্মী।
আবুল খায়ের নামে এক অভিনেতার পরামর্শে তার ভাগ্নি জামাতা অধ্যক্ষ রেজাউর রহমানের বাড়ি চরকুশাই গ্রামে আনা হয় রেকর্ডটি। অধ্যক্ষ রেজাউরের বাবা দানেছ খানের পরামর্শে তাদের বাড়ির ধানের গোলার ভেতর ভিডিও রেকর্ডটি লুকিয়ে রাখা হয়।
এ বিষয়ে আমজাদ আলী খানের ভাষ্য থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিও ধারণ হয়েছিল তৎকালীন সরকারের ক্যামেরায়। অনেকের চোখ ফাঁকি দিয়ে তা ডেভেলপ করার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্ষা করা হয় পাকিস্তানি হানাদারদের থাবা থেকে।
তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা দফতরে কর্মরত কয়েকজন মুক্তিকামী বাঙালির বীরত্বে রক্ষা পেয়েছিল বাঙালির ইতিহাসের এ অমূল্য সম্পদ।
ভাষণের মাসখানেকের মাথায় সেটা সচিবালয় থেকে লুকিয়ে নেয়া হয়েছিল দোহারের একটি বাড়িতে। সেখানে ধানের গোলায় মাসখানেক রাখার পর নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে।
৯ মাস পর ভিডিও রেকর্ডটি ফিরে আসে আবার স্বাধীন বাংলাদেশে। পাকিস্তানি সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সচিবালয় থেকে ঢাকার দোহারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের টেপ নিয়েছিলেন আমজাদ আলী খন্দকার; তিনি ওই সময় চলচ্চিত্র বিভাগের ক্যামেরা সহকারী ছিলেন।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাষণের রেকর্ড একটি বাক্সে ভরে লুকিয়ে রাখা হয় ওই বাড়িটিতে; যা ছিল নিরাপদ স্থান।