চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদ খনন শুরু হলেও নদে পানির পরিমাণ বেশী থাকায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নদের পানির স্তর কমে গেলেই পুনরায় খনন কাজ শুরু হবে। এদিকে দখলকারীদের দৌঁড়ঝাপের কারণে নদ খননের সময় অবৈধ দখল মুক্ত আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম জানান, কপোতাক্ষ নদের বর্জ্য নিরসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রিজ সংলগ্ন হতে মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন হবে। নদ খননের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন প্যাকেজে খনন কাজ শেষ করা হবে। নদকে যথাসম্ভব গভীর করার পাশাপাশি স্থানভেদে খননকৃত নদের আড় হবে ৩০ থেকে ৪৫ মিটার।
গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে নদ খননের উদ্বোধন করা হয়। ইতোমধ্যে তাহেরপুর ও পৌরসভার হুদো চৌগাছা এলাকায় নদ খননের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বৃষ্টিপাতে নদে পানি বেড়ে যাওয়া আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। পানির পরিমাণ কমে গেলে পুনরায় খনন কাজ শুরু করা হবে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
সরেজমিন কপোতাক্ষ নদ অববাহিকায় গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর দিয়ে কপোতাক্ষ নদটি অত্র এলাকায় প্রবেশ করে তা সীমান্ত দিয়ে বা কখনো বিভিন্ন গ্রামের মধ্য দিয়ে ছুটিপুর পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার চৌগাছা সীমানায় নদটি বিস্তৃত হয়েছে।
নদ এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়রা জানান, কপোতাক্ষ নদ ছিল এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র আশা ভরসা। জীবন জীবিকার প্রধান উৎস ছিল কপোতাক্ষ নদ। নদ সংলগ্ন গ্রাম এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কপোতাক্ষ নদ থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবন চালাতেন। কিন্তু কপোতাক্ষ নদ এখন কালের বিবর্তনে মৃত প্রায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নারায়ণপুর, পেটভরা, টেঙ্গুরপুর, চৌগাছা, কংশারিপুর, দিঘলসিংহা, মাশিলা, কাবিলপুর, খলশিসহ অনেক স্থানে নদের জমি দখল করা হয়েছে। নদের মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে পুকুর। চৌগাছা বাজারের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় নদের জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে আবাসন ও বহুতল ভবন। আবাসন এরিয়ায় ১৫ শতাংশ নদের জমি রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। অনেকে রংপুরসহ ভিন্ন জেলা থেকে এসে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নদ দখল করে আবাসস্থল তৈরি করেছেন। সন্ধ্যা হলেই বাজারের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা কপোতাক্ষ নদের বুকে ফেলে যান। ফলে ময়লা আবর্জনায় দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে নদটি।
নদের যে অংশে খনন কাজ শুরু করা হয়েছিল সেখানেও দেখা দিয়েছে নানাবিধ সমস্যা। নদ খনন করে খননের মাটি নদের পাড়েই ফেলা হয়। সে কারণে পানিতে সেই মাটি ধ্বসে নদের বুকেই পড়ছে। ফলে নদ খননের কার্যত সুফল স্থানীয়রা পাবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পেটভরা, টেঙ্গুরপুর গ্রামের টিপু সুলতান, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল গনি জানান, এক সময় কপোতাক্ষ নদ থেকে স্যালো মেশিন দিয়ে কৃষি ফসলি জমিতে সেচ দিতাম। কিন্তু এখন নদ এলাকায় সবজি চাষ করা তেমন সম্ভব হচ্ছে না। গভীর নলকুপ থেকে সেচ দেওয়া হলেও সেচের পানি কিনতে হয় চড়ামূল্যে। গভীর নলকুপের পানির চেয়ে কপোতাক্ষ নদের পানি জমির জন্য বেশী উপকারী। এই পানিতে জৈব সারের কাজ করে। কিন্তু নদের সেই অবস্থা আর নেই।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু আহম্মেদ জানান, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী কপোতাক্ষ নদ খনন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ম্যাপের মধ্যে অবৈধ্য স্থাপনা থাকলে সেগুলো দখলমুক্ত করা হবে।
পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন, কপোতাক্ষ নদকে আমরা যথেচ্ছাভাবে ব্যবহার করছি এতে কোনো সন্দেহ নেই। পৌরসভার পক্ষ থেকে তারানিবাস মৌজায় এলাকায় ১ একর ২৩ শতক জমি ক্রয় করা হয়েছে ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য। এর পরেও পৌরবাসী যদি কপোতাক্ষ নদে ময়লা আবর্জনা ফেলেন তাহলে প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবৈধভাবে নদ দখল ও ময়লা আবর্জনা ফেলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরুফা সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কপোতাক্ষ নদ দখলমুক্ত করা হবে।