ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক (ডিডি) আব্দুর রাজ্জাক রনি ও কেয়ারটেকার এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগ, এতিমদের টাকা আত্মসাৎ, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন প্রকল্পে তারা নয়ছয় করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পড়েছে। তবে উপ-পরিচালক বলছেন অভিযোগ ভিত্তিহীন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার ও জেলা কারাগার মসজিদের ইমাম এমদাদুল হক করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে শরীয়তপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দক্ষিণ বালুচরা রিয়াজুল জান্নাত নাসিরউদ্দিন কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির প্রতি মাসে সভা হয়। সেই সভার সম্মানি ভাতার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। মসজিদভিত্তিক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষক নিয়োগে নগদ উৎকোচ গ্রহণ, মসজিদভিত্তিক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভিন্ন কেন্দ্রের নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এ সব কাজে তাকে সহযোগিতা করেন জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক রনি। এতিমদের সেই প্রণোদনার অর্থ মোহতামিম থাকা অবস্থায় এমদাদুল হক আত্মসাৎ করার কারণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
এতিমদের টাকা ফেরত না দেওয়ায় দক্ষিণ বালুচড়া মধ্যপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও নাসির উদ্দিন এতিমখানার সভাপতি আলী আকবর মোল্লা ১৫ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি ২০১৯ সালে এমদাদুল হক শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর মৌলভীকান্দি জামে মসজিদের ইমাম জয়নাল আবেদীনকে ইসলামী ফাউন্ডেশনের সহজ কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নয় হাজার ৫০০ টাকা নেন। সেই টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য বিনোদপুর মৌলভীকান্দি জামে মসজিদের ইমাম জয়নাল আবেদীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আরও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একইভাবে শরীয়তপুর পৌরসভার বিভিন্ন মসজিদ কমিটির লোকজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শরীয়তপুর জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক একজনকে জাতীয় ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির শরীয়তপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। যদিও সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ইফার প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ জাতীয় ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন না।
সূত্র জানায়, ইসলামী ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হয় ১৩ জানুয়ারি। এ পরীক্ষার ফল সারা দেশে প্রকাশ হলেও শরীয়তপুর জেলায় এখনো প্রকাশ হয়নি। প্রতিদিন ফলপ্রত্যাশীরা অফিসে এসে জবাব না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
দক্ষিণ বালুচড়া মধ্যপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ও নাসির উদ্দিন এতিমখানার সভাপতি আলী আকবর মোল্লা বলেন, ‘এতিমদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা এর সুরাহা চাই।’
জাতীয় ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির শরীয়তপুর জেলার সভাপতি মুফতি কবির আহমেদ ফরিদি বলেন, অন্যায়ভাবে শরীয়তপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক রনি কেয়ারটেকার এমদাদুল হককে জেলা ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। এখন এমদাদুল হককে দিয়ে বিভিন্ন মিটিং করিয়ে সম্মানি ভাতা একাই গ্রহণ করছেন।
এ বিষয়ে এমদাদুল হক বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাস্টার ট্রেনার মোস্তাকিন বিল্লাহ দক্ষিণ বালুচরা রিয়াজুল জান্নাত নাসির উদ্দিন কওমি মাদ্রাসার উপদেষ্টা। তিনিই আমাকে মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে বলেন এবং এতিমদের টাকা রাখতে বলেন। ১০ জন ছাত্র দিতে বলেছিলেন মাস্টার ট্রেনার মোস্তাকিন বিল্লাহ। আমি ছাত্র দিতে পারিনি। এরপর আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাস্টার ট্রেনার মোস্তাকিন বিল্লাহর কাছে টাকা দিয়ে দিয়েছি। ছাত্র দিতে না পারায় এখন বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে। আমি এতিমদের টাকা আত্মসাৎসহ কোনো অনিয়ম করিনি।
এ ব্যাপারে মোস্তাকিন বিল্লাহ বলেন, ‘আমার কাছে কোনো টাকা দেয়নি। তিনি মিথ্যা কথা বলছেন।’
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই বলেন, শরীয়তপুর ইসলামী ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক রনি বলেন, আপনি আমার অফিসে আসেন। এ বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি।