খেঁজুর, গরু ও মুরগির মাংসের পর এবার পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা। পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে দুই টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হলেও কমছে না চালের দাম। গত দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে বেড়েছে। শুক্রবার প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল ৬৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে এই চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৬৬ টাকায়। একইভাবে মিনিকেট চাল কেজি ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালও বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
এছাড়া জিরা নাজির প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, কাটারিভোগ ৯০ টাকা, চিনিগুড়া চাল ৯৫ টাকা ও পাইজাম ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা দাম নেওয়া হচ্ছে। আর সোনালী মুরগির দাম কেজিতে বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে শুক্রবার পেঁয়াজের দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে। টিসিবি বলছে, বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সেক্ষেত্রে দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে দেশি পেঁয়াজ ২৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি দরে। রাজধানীর খুচরা বাজারে শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। যা দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। যা দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা।
আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, পবিত্র মাহে রমজান ঘনিয়ে আসতে না আসতেই দিনাজপুরে হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা পড়েছেন বিপাকে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এদিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘ ৩৫ দিন বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি।
দিনাজপুরের বিরল বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা হাসিনুর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহ আগে তিনি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার তিনি সেই পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে। তিনি জানান, পাইকাররা হঠাৎ দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর শহরের প্রধান কাঁচাবাজার বাহাদুরবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মাজেদুর রহমান জানান, গত ৪ থেকে ৫ দিন আগে তারা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ২২ থেকে ২৩ টাকা। চার দিনের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজ এখন তারা বিক্রি করছেন ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকা।
তিনি বলেন, স্থানীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। এখন তাদের পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে নাটোর, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেসব স্থানে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারের এই অবস্থা। মাজেদুর রহমান আরও বলেন, এই অবস্থা চললে রমজান ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৩৫ দিন বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি। হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকতা সোহরাব হোসেন মল্লিক প্রতাপ জানান, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর গত ২ জানুয়ারি থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক কম থাকায় গত ২৭ জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয় হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। এরপর গত ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে আমদানিকারকরা।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি কামাল হোসেন জানান, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। কিন্তু ভরা মৌসুমে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসান গুণতে হয় তাদের। এ জন্য তারা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখেন। বর্তমানে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা আবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন।