ভারতকে তাদের আগ্রাসী পানি নীতি পরিত্যাগ করতে হবে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, পানি সমস্যা ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা যাবে না। আর্ন্তজাতিক নদীর পানির সুষ্ঠ ব্যবহারের স্বার্থে নদী বিষয়ে ভারত, বাংলাদেশ, চীন, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক পানি ফোরাম গঠন কর, করতে হবে।
সোমবার (১৬ মে) ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘পথ মওলানা ভাসানী’ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্নকারী ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘ ও সকল আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থার সাহায্যে ভারতে উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। দেশের বিশিষ্ট নদী ও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতামতের ভিত্তিতে অভ্যন্তরীন পানি নীতি প্রণয়ন কর-দেশকে মরুভূমি ও লবনাক্ততার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। পরিবেশের স্বার্থে সকল পুকুর-জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সেসময়ই মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। আর সে কারণেই ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফারাক্কা, টিপাইমুখসহ ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প আছে কি? ভারত মূলত দুটি উদ্দেশ্যে পানি আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। এর একটি হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে পানিকে ব্যবহার করা আর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করা। ভারতের পানি আগ্রাসন রুখতে হলে ১৮ কোটি মানুষের ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে।
সংগঠনের সমন্বয়কারী ও সোনার বাংলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হারুন-অর-রশীদের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটবুর্যোর সদস্য আবুল হোসাইন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পার্টির সভাপতি এম এ গফুর, জনরাষ্ট্র আন্দোলনের সদস্য সচিব কামাল হোসেন বাদল, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ফরওয়ার্ড পার্টির সদস্য সচিব মাহবুবুল আলম চৌধুরী, জাতীয় জনতা পার্টি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী সেলিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব আবদুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এএসএম বদরুল আলম, বাংলাদেশ কল্যান ফোরাম সভাপতি মো. শহীদুননবী ডাবলু, বাংলাদেশ ন্যাপ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভুইয়া, জাতীয় নারী আন্দোলনের সভাপতি মিতা রহমান, সোনার বাংলা পার্টির দপ্তর সম্পাদক সোলায়মান চৌধুরী প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ হারুন-অর-রশীদ ফারাক্কার কারনে যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তার বিবরনও তুলে ধরে বলেন, এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলের দুইকোটি মানুষ সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দক্ষিনাঞ্চলের চারকোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গঙ্গা কপোতাক্ষ প্রকল্পের বিশাল এলাকায় সেচ দেয়া সম্ভব্ হচ্ছেনা। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভূগর্ভস্ত পানির স্তর অনেক নীচে নেমে গেছে। ভূগর্ভস্ত পানিতে আর্সেনিকের বিষাক্ত প্রভাব সুন্দর বনের প্রায় সতেরভাগ নষ্ট হয়েছে। মাছের পরিমান হ্রাস পেয়েছে।
সংহতি প্রকাশ করে বক্তারা বলেন বলেন, এককালের প্রমত্ত পদ্মা সুকিয়ে মরা গাঙ্গে পরিনত হয়েছে। এর অন্তত ছত্রিশটি শাখা নদী কার্যত মৃত খালের রূপ নিয়েছে। সার্বিকভাবে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে দেবার দাবিতে সবাইকে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর প্রদর্শিত পথে সোচ্চার হতে হবে।