আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জঙ্গি-সস্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ- জঙ্গি ও সন্ত্রাস ধ্বংস করতে যা যা প্রয়োজন তা করতে হবে। জঙ্গি দমন ও ধ্বংসে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম। আমরা জঙ্গি নির্মূলে জিরো টলারেন্স। আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন করে আতংক করে তুলছে রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ড। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বাংলাদেশে বাস করছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের তৎপরতা রয়েছে। তাদের ভেতর থেকেও জঙ্গির উত্থান হয়ে যেতে পারে। এ জন্য আমরা সতর্কাবস্থায় রয়েছি। যে কোনো ধরনের জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দ্রুততার সঙ্গে মোকাবিলা, নির্মূল ও ধ্বংস করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার ১৩তম বার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোকচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি- এমন পরিস্থিতিতে ভারত সব সময় আমাদের পাশে থাকবে। ইতোপূর্বে জঙ্গি নিমূূল ও ধ্বংসে ভারত সহযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হবে না- এমনটা বলা যাচ্ছে না। আমরা দেখেছি, মিয়ানমার থেকে ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জোর করে আমাদের দেশে, আমাদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা নানা সন্ত্রাসী কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এদের মধ্য থেকেই জঙ্গির উত্থান হতে পারে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠির মদদে তারা ইজি ইন পে হতে পারে। তবে আমরা এদের যে কোনো কর্মকাণ্ড সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় দেখছি। কিন্তু এই সমস্যাটা যদি শিগগিরই শেষ না হয়, তাহলে হয়ত আমাদের নতুন ডাইমেনশনে জঙ্গির উত্থান হয়েও যেতে পারে।
বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পছন্দ করে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে যারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী করেছে বা করতে চাচ্ছে তাদের কাউকেই ছাড়া হয়নি, ছাড়া হবেও না। দেশের মানুষ দেখেছে, জঙ্গিরা কী নির্মমভাবে সাধারণ মানুষ তথা আমাদের দেশে উন্নয়নকাজ করতে আসা বিদেশি লোকদের হত্যা করেছে। জঙ্গিদের আমরা নির্মূল করতে পেরেছি। মানুষ তাদের ঘৃণা করে। জঙ্গিদের মা-বাবারা তাদের সন্তানদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দিয়েছে। জঙ্গিদের লাশ পর্যন্ত স্বজনরা গ্রহণ করেনি। এতে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই, হবেও না।
ভারতের মুম্বাইয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় ১৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় আসাদুজ্জামান খান বলেন, ভারতেও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড হয়েছে। ভারত তা নির্মূল করছে-ধ্বংস করছে। ভারতের মানুষ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। ভারত-বাংলাদেশ একযুগে জঙ্গি-সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করছে। আগামীতেও দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনো মানুষই পছন্দ করে না। তারা মানবতার শত্রু। তাদের নির্মূল করতে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান ও নির্দেশনায় বাংলার মানুষ জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেে সোচ্চার হয়েছিল, আজও সোচ্চার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়তে যা যা প্রয়োজন তা করছেন। তার নির্দেশনায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় বহুলোক প্রাণ দিয়েছেন। ওই হামলায় শুধু ভারতীয় নয়, বিদেশি সাধারণ মানুষও প্রাণ দিয়েছেন। ভারত ওই হামলা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। ভারত জঙ্গি-সন্ত্রাসী নির্মূলে জিরো টলারেন্স। বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী নির্মূলে বর্তমান সরকার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। আমরা দেখেছি, জঙ্গি-সন্ত্রাসী নির্মূল ও ধ্বংসে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য তথা সাধারণ মানুষ সোচ্চার রয়েছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী নির্মূল ও ধ্বংসে বাংলাদেশের পাশে ভারত সব সময় আছে, থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বার বার হামলা হয়েছে জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে। জঙ্গিরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশেষ করতে চেয়েছে। জঙ্গিরা দেশীয় সংস্কৃতি-সাংস্কৃতি ধ্বংস করতে চাচ্ছিল। আমি আশা করি, জঙ্গিদের নির্মূলে বাংলাদেশও ভারতের পাশে সব সময় আছে এবং থাকবে।
তিনি বলেন, মুম্বাই হামলার ঘটনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ থেকে আমরা অনুপ্রেরণা পেয়েছি। কারণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই হামলার অনেক মিল রয়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন- মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজয়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সমাজকর্মী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রশীদ, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ন সাহা মণি।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, পাকিস্তান জঙ্গি-সন্ত্রাস বানানোর কারখানা। পাকিস্তান জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আস্তানা। পাকিস্তান সাধারণ নিরীহ মানুষের জন্য হিংস্র। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ্রহণকারী এবং পরিকল্পনাকারী পাকিস্তানের জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে ওই সময়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতারা সম্পৃক্ত ছিল। ওই হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গিদের জবানবন্দিতেই তা স্পষ্ট উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান সব সময় চায়- বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক। তারা সহযোগিতাও করছে। বাংলাদেশস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করে। তারা যে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করে, অর্থ প্রদান করে- তা প্রমাণিত। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের খেলোয়াররা তাদের দেশের পতাকা মিরপুর স্টেডিয়ামে উড়িয়ে যে হিংস্রতা দেখিয়েছে- তা মেনে নেওয়া যায় না। এমন বর্বরকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. আবদুর রশীদ বলেন, জঙ্গিরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছে-চাচ্ছে।২১ আগস্ট যে জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছিল, সেই হামলাকারী বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নাম এসেছে।মামলায় সাজা হয়েছে।একটি রাজনৈতিক দল, দলের হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র যখন এমন বর্বর জঙ্গি হামলা চালায়, তখন বোঝা যায় ওই সময়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে দায়িত্বরত শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা কী চেয়েছিল। কী ভয়ানক অবস্থা, জঙ্গি উত্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সহযোগী ছিল।যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হয়ে যায়, তাদের হয়ে কাজ করে, তখন রাষ্ট্র চরম হুমকিতে পড়ে। রাষ্ট্র অনিরাপদ হয়ে উঠে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সর্বদা সাধারণ মানুষ সোচ্চার থাকতে হবে।