এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে ওই কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার (২ জুন) এ রায় দেন। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের জারি করা সুয়োমোটো রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ বুধবার এ রায় দেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। ধর্ষণের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
হাইকোর্টের সুয়োমোটো রুলে নিরপরাধ গৃহবধূর নিরাপত্তা দিতে অবহেলা ও ব্যর্থতা এবং কলেজ ক্যাম্পাসে অছাত্রদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ ও হল সুপারের নীরবতার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
শিক্ষা, আইন ও স্বরাষ্ট্রসচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার, হল সুপারসহ ৯ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এ রুলের ওপর গত ১১ মার্চ শুনানি সম্পন্ন হয়। এরপর আদালত যেকোনো দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার আদেশ দেন। এ অবস্থায় আজ এ রায় দিলেন আদালত।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন গৃহবধূ। স্বামীকে বেঁধে মারধর করে ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। ওই দিন রাতেই শাহপরাণ থানায় মামলা করেন নির্যাতিতার স্বামী। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং আরো অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন- এম সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র। ওই ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এর মধ্যে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির ১৭৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন গত বছরের ২০ অক্টোবর হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে কলেজের অধ্যক্ষ, দুজন তত্ত্বাবধায়ক নিরাপত্তাকর্মীকে দায়ী করা হয়।
পরবর্তী সময়ে মামলায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সাইফুর রহমানসহ ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে আসামি করে আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একটি ধর্ষণের, অপরটি ছিনতাইয়ের অভিযোগে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগের মামলাটি সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ১৭ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আর ছিনতাইয়ের অভিযোগের মামলা সিলেট দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।