কলাবাগানে নিজ বাসায় নারী চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি (৪৭) হত্যার পরদিনও (১ জুন) কোনো মামলা হয়নি। ঘটনার পরই থানা পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, পিবিআই ও র্যাব বিষয়টি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। তবে পরিবারের পক্ষে মামলার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। কিন্তু এতে করে তদন্ত থেমে থাকবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নির্দিষ্ট সময়ের পর স্বজনদের কেউ মামলা না করলে একজন এসআই পদের কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করবেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ঘটনার ধরন এবং উদ্ধারকৃত লাশের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত এটিকে হত্যাই মনে করছেন তারা। এ ঘটনায় অন্তত ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও জানায় পুলিশ।
তদন্তকারী সূত্রগুলো বলছে, ওই নারী চিকিৎসকের সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক, দ্বিতীয় বিয়ে ও তার ধারাবাহিকতা, কর্মস্থলে অবস্থান, বাসায় সাবলেট দেওয়া, মা ও সন্তানদের থেকে আলাদা থাকা- এসব বিষয় নিয়ে তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল কি না- সেই বিষয়ে চলছে অনুসন্ধান। পরিবারের পাশাপাশি তার বন্ধু, শুভাকাঙ্খী ও প্রতিবেশিদের থেকেও নেওয়া হচ্ছে তথ্য। রোববার দিবাগত রাতেই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হতে পারে- এমন ধারণা থেকে ওই সময়ে এলাকাটিতে চলাচলের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। ফ্ল্যাটটিতে অন্য কারও যাওয়া-আসা ছিল কি না- থাকলে তারা কারা- তা জানতেও কাজ করছে পুলিশ।
জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেনশাহ মাহমুদ যুগান্তরকে জানান, ওই চিকিৎসকের পিঠে ও গলায় ধারালো অস্ত্রের গভীর জখমের চিহ্ন আছে। এ ছাড়া পিঠের দিকে পোড়ার ক্ষত রয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের বাসায় সাবলেট থাকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী, তার বন্ধু, বাসার দাড়োয়ান ও গৃহকর্ত্রীসহ অন্তত ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই নারী পরিবার ছাড়া একা থাকার কারণ কী- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কর্মস্থল কাছাকাছি হওয়ায় তিনি সেখানে একা থাকতেন। আবার মায়ের সঙ্গে থাকতেও কমফোর্ট ফিল (স্বাচ্ছন্দবোধ) করতেন না। বোঝাপরায় কিছুটা ‘গ্যাপ’ ছিল তাই আলাদা থাকতেন।
সোমবার দুপুরের দিকে ৫০/১ ফাস্ট লেনের বাসার তৃতীয় তলা থেকে ওই নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন ওই নারী। উদ্ধারের পর মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত নারীর পিঠে ও গলায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা, তাকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অথবা ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা ছিল খুনির। সেজন্য লাশ পরে থাকা বিছানার জাজিমে আগুন ধরানো হয়েছিল। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার ওই কক্ষটিতে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশে খবর দেয়। তালাবদ্ধ থাকায় কক্ষটি ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা হয।