করোনা মহামারির কারণে মুসলমানদের হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়নি সৌদি আরব। এবার শুধু ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরা হজে যেতে পারবেন। আপাতত এমনই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সৌদি আরব সরকার। তাই অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ নিয়ে। তবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
প্রতিবছর সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি শেষে হজ-প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এ বছর এখনও কোনও প্যাকেজ ঘোষণা হয়নি।
সম্প্রতি সৌদি আরব সরকার ঘোষণা দেয়, হজে যেতে হলে কোভিড ১৯-এর টিকা নিতেই হবে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে গেজেটও প্রকাশ করেছে। তবে কোন দেশ থেকে কতজন অংশ নিতে পারবেন, বিধিনিষেধ কেমন হবে, সে সবের বিস্তারিত জানা যায়নি।
১৫ মার্চ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজ নিয়ে একটি বৈঠক করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (হাব) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
সৌদি আরব যেহেতু ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের হজে যেতে দেবে, সেই ঘোষণার ভিত্তিতে প্রস্তুতির পক্ষে মত দেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ সালে হজে যাওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছিলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের ভ্যাকসিন দিয়ে হজের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
দেশে ৪০ বছরের নিচের বয়সীদের করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ না থাকায় বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয় ১৮ বছরের ওপর ও ৪০ বছরের নিচে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার সুযোগ দিতে।
সে সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা নিবন্ধিত সব বয়সী হজযাত্রীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার আশ্বাস দেন। মে’র মধ্যে হজের জন্য নিবন্ধনকৃতদের টিকার দুটি ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে অনুরোধ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওমরাহ যাত্রী ও পর্যটক প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয় সৌদি আরব। এরপর থেকে এখনও বাংলাদেশ থেকে ওমরা পালনের অনুমতি মেলেনি।
প্রতিবছর হজে সারা বিশ্বের ২০ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। তবে করোনার কারণে আশঙ্কা করা হয়েছিল, হজ বাতিল করতে পারে সৌদি আরব। গেলো বছর সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রায় ১০ হাজার মানুষ হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। তবে নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে কাবা শরিফ স্পর্শ করতে দেওয়া হয়নি হাজিদের। স্বাস্থ্যগত সুরক্ষায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছিল দেশটির সরকার।
১৬ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের হজের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি সিস্টেমে নিবন্ধিত ৬০ হাজার ৭০৬ জনকে করোনার ভ্যাকসিন নিতে হবে। এরমধ্যে ১৮ বছরের উপরে ও ৪০ বছরের নিচে রয়েছেন ৪ হাজার ৮৩৩ জন।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সৌদি আরব শুধু ভ্যাকসিন দিতে হবে বলেছে। এর বাইরে কোনও ঘোষণা দেয়নি। ফলে আদৌ বাংলাদেশিরা হজে যেতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। সুযোগ দিলেও কতজন যেতে পারবেন তাও নিশ্চিত নয়। তবে প্রস্তুতি হিসেবে গতবার যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
করোনা মহামারি না হলে ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারতেন। গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রিসভা সরকারিভাবে হজ পালনে প্যাকেজ-১-এ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং প্যাকেজ-২-এ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, প্যাকেজ-৩-এ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা অনুমোদন করে। অন্যদিকে ২৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। এর একটি হলো সাধারণ, অন্যটি ইকোনমি।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সাধারণ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮শ’ টাকা। ইকোনমি প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এবারের হজের ব্যয় সম্পর্কে এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সৌদি আরব আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেই সব পরিষ্কার হবে। নতুন কোনও চার্জ ধরছে কিনা, হজযাত্রীদের আবাসন ব্যয় কেমন হবে, এসব জানার পর খরচ বলা সম্ভব হবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম বলেন, হজ নিয়ে সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যাতে যেকোনও ঘোষণা এলেই হজে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
খরচ প্রসঙ্গে মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে খরচ। বাড়তি খরচের প্রয়োজন হলে হজযাত্রীদের তা দিতে হবে।’
তবে যারা প্রাক-নিবন্ধন করেছেন তাদের নিবন্ধনের কার্যকারিতা থাকবে বলেও জানান ধর্ম সচিব। তিনি বলেন, যারা প্রাক-নিবন্ধন করেছেন, তাদের সবার নিবন্ধনের কার্যকারিতা থাকবে। পর্যায়ক্রমে সুযোগ পাবেন সকলে।