জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেন, এই খাতে হরিলুট চলছে। বিষয়টি নিয়ে একদিন সংসদে সাধারণ আলোচনা হওয়া দরকার।
জবাবে সাধারণ আলোচনার পক্ষে একমত প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, জোট সরকারের আমলে দিনে ১৭ ঘণ্টা দেশ অন্ধকারে ছিল। বিদ্যুৎ চাওয়ায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
এ ছাড়া রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কম্পানিকে ৮৬ হাজার টাকা দেওয়ার সত্যতা জানতে চেয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রশ্নোত্তরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা ৫০ বার বলেছেন। প্রসঙ্গ ছাড়াই তিনি এটা বলেছেন। দয়া করে আপনি জানাবেন, বিএনপি আমলে বিদ্যুতের দাম কত ছিল, গ্যাসের দাম কত ছিল? দায় মুক্তি কেন এখনো বহাল রেখেছেন?’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি সেক্টরে লুটপাট চলছে, ভয়ানক অরাজকতা চলছে। একদিন সময় দিন, সংসদে আলোচনা হোক। আমরা আলোচনা করব। ’
তিনি আরো বলেন, ‘ভূতের মুখে রাম নাম মানায় না। আমি স্পষ্ট জানতে চাচ্ছি বিএনপি সরকার যে গ্যাসের চুক্তি করেছিল এমন কোন কোন চুক্তির প্রমাণ আপনার কাছে আছে কি না? থাকলে সেটা এই সংসদে উত্থাপন করবেন। ’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বিএনপি আমলে চালের দাম কত ছিল? একটি ডিমের দাম কত ছিল? দুধের কেজি কত ছিল? এই উত্তরগুলো সংসদে দেন। শুধু দায়ী করলে হবে না। মাননীয় স্পিকার আপনি সময় নির্ধারণ করে দেন। শুধু জ্বালানি সেক্টর নিয়ে আলোচনা হোক। আজকে মানুষ হাহাকার করছে। তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। আজকে জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। এটা কী হচ্ছে? আগামীতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম আর বাড়াব না, আপনি সেই আশ্বাস দেন। ’
হারুনুর রশীদের এই বক্তব্যে সরকারদলীয় সদস্যরা হৈচৈ শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্পিকার হারুনুর রশীদকে থামানোর চেষ্টা করেন। স্পিকার তাকে প্রশ্ন করার অনুরোধ জানাতে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি জোট সরকারের আমলে চালের দাম, তেলের দাম, ডিমের দাম, বিদ্যুতের দাম কত ছিল, তা জানতে চাই। ’ এরপর প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উত্তর দিতে উঠলে অধিবেশন কক্ষে হট্টগোল শুরু হয়।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্য অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। সত্য কথা অনেকে সহজভাবে নিতে পারেন না। আমিও চাই সংসদে একদিন সময় দেওয়া হোক। জ্বালানি নিয়ে আলোচনা হোক। নাইকো মামলা নিয়ে যে পরিমাণ তথ্য আমাদের হাতে আছে, তাদের নেতা তারেক জিয়ার বন্ধু যে পরিমাণ সাক্ষাৎকার এফবিআইয়ের কাছে দিয়েছেন তার রেকর্ড আমরা তুলে ধরতে চাই। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টে যে পরিমাণ চুরি হয়েছে, সেই তথ্য-প্রমাণও আমাদের হাতে আছে। আমরা সেগুলো এই সংসদের স্ক্রিনে দেখাতে চাই। খাম্বা কম্পানি তৈরির পর লুটপাটের হিসাবও আমাদের কাছে আছে। নির্বাচন সামনে আসছে, প্রস্তুত থাকুন, সব কিছু আমরা দেশবাসীকে দেখাব। ’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জোট সরকারের আমলে সকলেই ১৭ ঘণ্টা অন্ধকারে ছিলেন। আর উনি বিদ্যুতের দামের কথা বলেন। অন্ধকারে থাকার যে সংকট, সেই কষ্টের কথা বলেন। সেই সময় বিদ্যুতের অবচয় ছিল ৪৪ শতাংশ। এই অপচয়টা দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন তারা। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসাটে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। খাদ্যই তো দিতে পারেননি, দাম নিয়ে আলোচনা কী হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা চলবে। লজ্জা-শরম নেই বলেই তারা এই আলোচনা করেন। ’
এরপর সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপনকালে জাপা মহাসচিব মুজিবুর হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা লোড শেডিংয়ের মধ্যে আছি। আশা করছিলাম এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা জানালেন, আগামীতে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ গতে পারে। জানি না কী পরিস্থিতি তৈরি হবে। ’
তিনি বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় দেখলাম বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি কম্পানি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কম্পানিকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আবার সঞ্চালন লাইনের অভাবে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া যাচ্ছে না। ’ আসলে পরিস্থিতি কী তা জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
প্রশ্নোত্তর পর্বে জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বিএনপির রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় হচ্ছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। আর একই ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। পাকিস্তান আমলে ভূমি অধিগ্রহণ সত্ত্বেও কেন চার গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে?’ কাতারসহ অন্য দেশ থেকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্পট মার্কেট থেকে কেন জ্বালানি কেনা হচ্ছে তা জানতে চান তিনি।
সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে মোট উত্তোলনযোগ্য প্রমাণিত ও সম্ভাব্য গ্যাসের মজুদ (২পি) ২৮ দশমিক ৫৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। তবে শুরু হতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ক্রমপুঞ্জীভূত গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সে হিসাবে বর্তমানে উত্তোলনযোগ্য অবশিষ্ট মজুদের পরিমাণ ৯ দশমিক ০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।